গোলাপগঞ্জে ভুয়া তালাক নামা দিয়ে ৬২ বছরের প্রবাসীর মালা বদল !
দৈনিক মানচিত্র ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণসৈয়দ জেলওয়ার হোসেন স্বপন, গোলাপগঞ্জ
গোলাপগঞ্জে প্রতারণা করে স্ত্রীর বিশ্বাস ভঙ্গ করে ও তথ্য গোপন করে ভূয়া তালাকনামা বানিয়ে প্রবাসী ও সাবেক বিমানের পাইলটের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে মালা বদল করাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তোলপাড় চলছে। বিয়ের পাশাপশি ওই প্রবাসীর বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনায় গোটা উপজেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
বৈধভাবে দ্বিতীয় বিয়ে না করায় সচেতন মহলের মধ্যেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে প্রথম স্ত্রী ও ছেলে, মেয়েকে অস্ট্রেলিয়ায় রেখে স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে গোপনে তথ্য গোপন করে বাংলাদেশে এসে ৬২ বছর বয়সে ২৩ বছরের মেয়ের সাথে মালা বদলের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিয়ে সম্পন্ন করায় নানা প্রশ্নের রহস্য ঘোরপাক খাচ্ছে। অবৈধ প্রন্তায় ভুয়া তালাক নামা সৃষ্টি করে বিবাহ সম্পন্ন ও নিকাহনামা করায় কাজী অফিসের অনিয়ম নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ফৌজদারি আইনে তথ্য গোপন করে একাধিক বিয়ে করা একটি দন্ডনীয় অপরাধ থাকার পরও প্রবাসী ভূয়া তালাকনামা সৃষ্টি করে দ্বিতীয় বিয়ে করায় বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী বলে সচেতন মহল মনে করছেন। ওই প্রবাসীর রুকনুজ্জামানের বাড়ি উপজেলার রণকেলী দক্ষিণভাগ গ্রামে। তিনি মৃত আব্দুল লতিফ চৌধুরীর ছেলে। তিনি বিগত সময়ে প্রবাসে সাবেক বিমানের পাইলট ছিলেন বলে জানা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রবাসী রুকনুজ্জামান চৌধুরী প্রায় ৩৫ বছর আগে একই উপজেলার একই গ্রামের ইদ্রিছ চৌধুরীর মেয়ে কাওসানা চৌধুরী মনার সাথে বিবাহে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে প্রায় ২৬ বছরের এক ছেলে ও ২৮ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। প্রবাসী রুকনুজ্জামান চৌধুরী স্ত্রী কাওসানা চৌধুরীসহ ছেলে মেয়েকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। তাদের দাম্পত্য জীবন ভালই চলছিল। হঠাৎ দীর্ঘদিনের গড়া সংসারকে তছনছ করে দেশে এসে প্রথম স্ত্রীর সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করে দ্বিতীয় বিয়ে করেন বলে প্রবাসীর আত্মীয়দের সূত্রে জানা যায়।
প্রবাসীর ঘনিষ্ট আত্মীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরেও স্ত্রী কাওছানা চৌধুরী মনা ও সন্তানদের নিয়ে দেশে ভ্রমণ করে এক সাথে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরেন রুকনুজ্জামানসহ তার পরিবার। স্ত্রীকে অস্ট্রেলিয়ায় রেখে দেশে ফের আসেন প্রবাসী রুকনুজ্জামান। দেশে এসেই চলতি বছর ১৯ জুন পূর্বের স্ত্রী কাওসানা চৌধুরীকে না জানিয়ে গোপনে ৬২ বছর বয়সে একই উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউপির ছত্রিশ গ্রামের ছেরাগ উদ্দিনের কন্যা রওশান আরা আক্তার সুপি (২৩)কে ২য় বিয়ের জন্য বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। এ সময় কাজী জানতে পারেন প্রবাসীর অপর আরো এক স্ত্রী রয়েছে। এ সময় বিয়ের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে ও প্রথম স্ত্রীর অনুমতিপত্র চান গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের ম্যারেজ রেজিষ্টার কাজী শামিম আহমদ। এ সময় রুকনুজ্জামান চৌধুরী চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারী প্রথম স্ত্রীকে তালাকনামা প্রদান করেছেন মর্মে শাহপরাণ থানার, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০নং ওয়ার্ডের কাজী অফিসের একটি তালাকনামা প্রদান করেন। ওই তালাক নামার আলোকে কাজী শামিম আহমদ বিয়ে সম্পন্ন করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় রুকুনুজ্জামানের দাখিলকৃত তালাকনামাটি সংশ্লিষ্ট কাজী অফিসের নয়। সেটি ভূয়া ও বলে জানান সিটি কর্পোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের ম্যারেজ রেজিষ্টার অফিসের কর্তৃপক্ষ। এতে করে প্রবাসীর দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে থলের বিড়াল বের হয়ে আসে এবং তার দ্বিতীয় বিয়ের বৈধতা নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। পাশাপাশি ভুয়া তালাকনামা সৃষ্টি করে দ্বিতীয় বিয়ে করায় প্রবাসী আইনত দন্ডনীয় অপরাধ করছেন বলে প্রতিয়মান করছে স্থানীয়রা। এদিকে রুকনুজ্জামানের আত্মীয়-স্বজন ভুয়া তালাকনামা সৃষ্টি করে অবৈধ ভাবে বিয়ে করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।
রুকনুজ্জামানের আত্মীয় সূত্রে জানা যায়, প্রবাসীর তার প্রথম স্ত্রীর সাথে এখনও সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছেন পাশাপাশি প্রবাসী রুকনুজ্জামানের বাসা অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম স্ত্রী কাওসানা চৌধুরী বসবাস বিদ্যমান রয়েছে। স্ত্রী জানেন না স্বামী তাকে তালাক দিয়েছেন। এ বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়। এদিকে রুকনুজ্জামান চৌধুরীর এক আত্মীয় প্রতিবেদককে জানান, রুকনুজ্জামান চৌধুরী তার ছেলে ও মেয়েকে এক মেসেজ বার্তায় জানিয়েছেন প্রবাসী তার স্ত্রীকে দেশে তালাক দিয়েছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় তালাক দেননি। বাংলাদেশের দেয়া তালাক অস্ট্রেলিয়াতে গ্রহণ যোগ্য নয় বলে মেসেজ বার্তায় জানান। এ নিয়ে প্রবাসী রুকনুজ্জামানের ২য় বিয়ের বৈধতা নিয়ে নানা রহস্য দেখা দিয়েছে। বিষয়গুলো তদন্তক্রমে খতিয়ে দেখে দ্বিতীয় বিয়ের বৈধতাসহ রহস্য উদঘাটন করতে রুকনুজ্জামানের আত্মীয়-স্বজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলার গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৪, ৫, ও ৬নং ওয়ার্ডের ম্যারেজ রেজিষ্টার কাজী শামিম আহমেদের সাথে ২য় বিয়ের বৈধতা বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, রুকনুজ্জামান প্রথম স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদের তালাকনামা দাখিল করায় দ্বিতীয় বিবাহের সম্পন্নসহ কাবিননামা নিবন্ধন করেন। তালাকনামা বৈধ না ভূয়া সেটা তিনি জানেন না।
এ ব্যাপারে শাহপরাণ থানার সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের ম্যারেজ রেজিষ্টার অফিসে যোগাযোগ করলে ওই অফিসের কর্তৃপক্ষ এ প্রতিবেদককে জানান, ওই তালাকনামটি তার কার্যালয়ের নয়। তালাক নামার প্রদত্ত স্বাক্ষর, শীলসহ তালাকনামাটি ভূয়া বলে জানান।
এ ব্যপারে প্রবাসী রুকনুজ্জামান চৌধুরীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সবুজ সিলেট/নভেম্বর ২৪/ সুমন আহমদ