মহাজোট ছেড়ে দেবে জাপা
দৈনিক মানচিত্র ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১২:১০ অপরাহ্ণসবুজ সিলেট ডেস্ক ::
‘বড়’ দলের সঙ্গে জোট নয়, রাজনীতিতে ‘একলা চলো’ নীতি গ্রহণ করছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। আর সেই নীতি বাস্তবায়ন করতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ও নিয়েছে। এখন চলছে সেই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়নের প্রস্তুতি। আট বিভাগে দলটির পক্ষে জনসমর্থন যাচাই করতে চলছে জরিপ। সেই জরিপের ফল পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা মহাজোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেবেন। দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, জানুয়ারি মাসে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আসতে পারে সেই ঘোষণা।
জাতীয় পার্টির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত কয়েকমাস ধরে দলের আটটি প্রতিনিধি দল আটটি বিভাগে জনসমর্থন জরিপের কাজটি করছে। জেলা-উপজেলাগুলোতে কী পরিমাণ মানুষ জাতীয় পার্টির পক্ষে সমর্থন রয়েছে, তৃণমূল পর্যায় থেকে সেই তথ্যই তুলে আনছেন তারা। জরিপ শেষ করে তার তথ্য এ বছরের শেষ নাগাদ সংকলিত করতে পারবেন বলে মনে করছেন দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধি দলের নেতারা। সেক্ষেত্রে মহাজোট ছাড়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি এ বছরের মধ্যেই নিয়ে জানুয়ারিতে ঘোষণা আসতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সম্প্রতি জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি সভায় মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে বলে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেছেন। তারা বলছেন, জাতীয় পার্টি নিজস্ব নীতি-আদর্শ ও রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে আওয়ামী লীগে ডুবে গেছে। জাতীয় সংসদসহ সব ক্ষেত্রে দলটির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যরাও আওয়ামী বন্দনায় মগ্ন। সংসদ তো বটেই, সংসদের বাইরেও দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্দ এরশাদের নাম পর্যন্ত কোনো নেতা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের। ফলে জাতীয় পার্টি আদৌ নিজেদের কোনো রাজনীতি করছে কি না, তা নিয়েই সন্দিহান তারা্
কেবল এই প্রতিনিধি সভা নয়, পার্টির জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও একই কথা বলছেন। বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তারা জাতীয় পার্টিকে মহাজোট থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র পরিচয় নিয়ে রাজনীতি করার পক্ষে মত দিয়েছেন। দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বরাবর তারা এই পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে, কেবল জনসমর্থন যাচাই নয়, পার্টিকে শক্তিশালী করা ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য তিনশ আসনে যোগ্য প্রার্থী সন্ধানের কাজটিও করে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। আটটি বিভাগে আটটি প্রতিনিধি দল এই কাজে সফর করে বেড়াচ্ছেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগে জেলা ও উপজেলায় গিয়ে নেতাকর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সেসব বৈঠকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছেন দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামত গুরুত্ব দিয়ে শুনছেন। দলীয় সূত্র বলছে, তৃণমূল থেকে উঠে আসা এসব মতামত নিয়ে আলোচনা করার জন্য দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে যৌথ বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে শারীরিকভাবে এই বৈঠক আয়োজন করা না গেলে হতে পারে র্ভাচুয়াল বৈঠক।
জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রতিনিধি সভায় ২১ জন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীর বক্তব্যের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বক্তব্যে মিল খুঁজে পেয়েছেন পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ঢাকা মহানগর জাপা নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ফুটবল খেলতে গেলে কখনো খেলোয়াড় বল নিয়ে প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের কাছে পৌঁছে গেলেও বল ফিরিয়ে এনে নিজের গোলরক্ষকের কাছে ব্যাক পাস দেয়। আবার সুযোগ বুঝে প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে বল নিয়ে আক্রমণ করে। জাতীয় পার্টি বর্তমানে এই ভূমিকায় রয়েছে। সুযোগ বুঝে জাতীয় পার্টি ঠিকই রাজনীতির মাঠে সঠিকভাবে আক্রমণ নিয়ে ফিরবে।
দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলছেন, জাপা চেয়ারম্যান নিজেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এমন মনোভাবের বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছেন। বিষয়গুলো নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এসব বিষয়ে জানতে জি এম কাদেরের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি অবশ্য রিসিভ করেননি।
এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর সঙ্গে। তিনি বলেন, আটটি প্রতিনিধি দল দেশের প্রত্যেকটি বিভাগীয় জেলা-উপজেলায় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। আমরা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি। আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে শক্তিশালী করতে এখন থেকেই এই উদ্যোগ নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা চাই, জাতীয় পার্টি আগামীতে কারও লেজুরবৃত্তি করবে না।
মহাজোট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে আসার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর না দিলেও জিয়াউদ্দিন বাবলুর বক্তব্য, জাতীয় পার্টি প্রকৃতপক্ষে মহাজোটে নেই-ই। বাবলু বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন বিরোধী দল। এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়ার কিছু নেই। কারণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠক হয়, মহাজোটের বৈঠক হয় না। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক কখনও হয়ওনি।’