জাহান্নাম থেকে মুক্তি মেলে যেসব আমলে
দৈনিক মানচিত্র ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০২০, ৩:০০ অপরাহ্ণ
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক :: মানবজাতির প্রকৃত সফলতা হলো, জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করা। যে রাজকীয় জীবন যাপন করে তার শেষ পরিণতি জাহান্নাম হয়, সে কোনোভাবেই সফল নয়। আমাদের সবাইকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যুর পরই নির্ধারিত হবে, কে সফল আর কে ব্যর্থ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবলমাত্র কিয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। অতঃপর যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)
তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত দুনিয়ার মরীচিকার পেছনে জীবনকে ধ্বংস না করে আল্লাহর নির্দেশ পালন করা। যেসব আমলের মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, সেই আমলগুলোতে আত্মনিয়োগ করা। নিম্নে সেরকম কিছু আমল তুলে ধরা হলো—
ঈমান আনা : ঈমান সবচেয়ে বড় সম্পদ। যে এই সম্পদ অর্জন করতে পারেনি, সে কিছুই পায়নি। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলতেন, কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীকে হাজির করা হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে তোমার যদি দুনিয়া ভর্তি সোনা থাকত তাহলে তুমি কি বিনিময়ে তা আজাব থেকে বাঁচতে চাইতে না? সে বলবে, হ্যাঁ। এরপর তাকে বলা হবে তোমার কাছে তো এর চেয়ে বহু ক্ষুদ্র বস্তু (আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য হিসেবে মেনে নেওয়া) চাওয়া হয়েছিল। (বুখারি, হাদিস : ৬৫৩৮)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকি থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৪)
পরিবারকে সুশিক্ষা দেওয়া : আলী (রা.) আল্লাহর বাণী : ‘তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬) এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পরিবার-পরিজনকে কল্যাণকর বিষয় শিক্ষা দান করো।’ (আততারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ১১৯)
এর কারণ হলো, পরিবার যখন সুশিক্ষা পাবে, তখন তারা আল্লাহর আনুগত্য করবে, এবং তার পূর্বপুরুষদের জন্য দোয়া করবে, এতে করে তারা নিজেরাও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে পারবে, তেমনি তাদের দোয়া ও নেক আমলের সুফল তাদের সুশিক্ষাদাতা পরিবারকর্তাও পাবে।
ইবাদত করা : আবু আইয়ুব (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর খিদমতে হাজির হয়ে আরজ করল, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন, যে আমল আমাকে জান্নাতের কাছে পৌঁছে দেবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। রাসুল (সা.) বলেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করবে না, নামাজ কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। সে ব্যক্তি চলে গেলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাকে যে আমলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা দৃঢ়তার সাথে পালন করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৪)
দান-সদকা ও ভালো ব্যবহার : আদি ইবনে হাতিম (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। এমনকি আমরা ভাবছিলাম যে তিনি বুঝি জাহান্নাম সরাসরি দেখছেন। তিনি আবার বলেন, তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। আর যদি কেউ সেটাও না পাও তাহলে উত্তম কথার দ্বারা হলেও (আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করো)। (বুখারি, হাদিস : ৬৫৪০)
আল্লাহর রাস্তায় রোজা রাখা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিন রোজা রাখে, আল্লাহ তার বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে তার মুখমণ্ডলকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭১৮)
আরাফার দিন : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাগণের কাছে গর্ববোধ করে বলেন, এরা কী চায়? (অর্থাৎ যা চায় আমি তাদেরকে তা-ই দেব)। (মিশকাত, হাদিস : ২৫৯৪)