ছাতক পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে সম্ভাব্য ৬ প্রার্থী প্রচারনায়
দৈনিক মানচিত্র ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৪১ পূর্বাহ্ণবিজয় রায়, ছাতক ::
২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারী ছাতক পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা প্রচারনায় নেমেছেন। মেয়র প্রার্থীরা এখনো আনুষ্ঠানিক প্রচারনা শুর না করলেও সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। মেয়র পদে প্রার্থীতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও তেমন নির্বাচনী প্রভাব এখানো লক্ষ্য করা যায়নি। এখন পযর্ন্ত ৩ জন প্রার্থীর কর্মী সর্মর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইস বুকের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যেতে দেখা গেছে।
বিগত পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৫ সালে ৩০ ডিসেম্বর। আসন্ন পৌর নির্বাচনে এখানে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র ছাড়াও আরো ৫ প্রার্থীর নাম শুনা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর তালিকায় ক’জন ঠিকে থাকবেন ভোটাররা তারই অপেক্ষায় রয়েছে। পৌর নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারনা চালালেও প্রার্থীরা নিজেদের প্রার্থীতার ব্যাপারে এখনো খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসছেন না। এখন পর্যন্ত যে ৬ জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে ৩জন সরকারী দলের এবং অপর ৩জন বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যগ্ম সম্পাদক, ছাতক পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী, ছাতক উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক, পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ মজনু ও যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমান চৌধুরী সুমন এবং বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত, সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশিদা আহমদ ন্যান্সি, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতা শামছুর রহমান শামছু (বিগত পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে মেয়র প্রার্থী ছিলেন) ও ছাতক পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জসিম উদ্দিন সালমান।
১০.১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাতক পৌরসভা ইতিমধ্যেই ৪টি নির্বাচন কাল পার করে ৫ম নির্বাচনের জন্য এখন দরজায় কড়া নাড়ছে। প্রতিষ্ঠার প্রথম দু’ বছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল খালেক পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১১৯৯ সালে এ পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকালিন প্রথম নির্বাচনে পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ মজনু। পরবর্তি ২০০৫, ২০১১ এবং ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী হ্যাট্রিক বিজয় লাভ করেন। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে ২০০৫ সালে পৌর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মাহফুজ শিপলু এবং রানিং পৌর চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ মজনুকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে ছাতা প্রতীকে প্রথম বারের মতো পৌর পিতা নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবুল কালাম চৌধুরী।
২০১১ সালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে কাপ-পিরিচ প্রতীকে ৭ হাজার ৪৬৯ ভোট পেয়ে ২য় বারের মতো পৌর মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এসময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিালেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও যুবলীগ নেতা সাইফুর রহমান চৌধুরী খোকন(জাহাজ) পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৮৩৮ এবং আব্দুল ওয়াহিদ মজনু(আনারস) পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৮৭১ ভোট। সর্বশেষ ২০১৫ সালে নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে ১০ হাজার ৮২৬ ভোট পেয়ে হ্যাট্রিক বিজয় লাভ করেন আবুল কালাম চৌধুরী।
মোবাইল ফোন প্রতীকে ৪ হাজার ৬৫১ ভোট পেয়ে ২য় স্থানে ছিলেন আব্দুল ওয়াহিদ মজনু এবং বিএনপির প্রার্থী দলীয় ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ৩৫০ ভোট পেয়ে শামছুর রহমান শামছু ছিলেন ৩য় স্থানে। বিগত ৪টি পৌর নির্বাচনেই মেয়র পদে একজন শক্তিশালী প্রাথী হিসেবে আওয়ামীলীঘ নেতা আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ মজনু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিগত নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার আপ্রান চেষ্টা করেছিলেন। এ বছরও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া নতুন মুখ হিসেবে উপজেলা যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমান চৌধুরী সুমনও মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। তিনি শহরের বাগবাড়ী গ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি মরহুম সুনু মিয়া চৌধুরীর পুত্র এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান চৌধুরী খোকনের ছোট ভাই। পারিবারকি ঐতিহ্য পৌরবাসীর সমর্থন নিয়ে তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছে রয়েছে বলে তার সমর্থকরা জানিয়েছেন। বিএনপি থেকে মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।
এর মধ্যে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে রাশিদা আহমদ ন্যান্সি বিপুল ভোটে প্রথম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালনকালে তার দায়িত্বপরায়নতা ও কর্মদক্ষতা মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। তিনি মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে আসন্ন পৌর নির্বাচনের বৈতরনী পাড়ি দিতে চান। এখানের দ্বিধাবিভক্ত বিএনপির একটি বলয়ের সাথে তিনি যুক্ত রয়েছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, বিগত পৌর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শামছুর রহমান শামছু আবারো দলীয় মনোনয়নে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছন।
দেশের রাজনৈতিক প্রতিকুল পরিবশেও বিগত নির্বাচনে তিনি সম্মানজনক ভোট পেয়েছিলেন বলে তিনি মনে করেন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্ত ও মনোনয়ন পেলেই তিনি আসন্ন পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। আসন্ন পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী জানান, নির্বাচন একটি গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। প্রার্থী হওয়া সকলেরই একটি গনতান্ত্রিক অধিকার।
ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার ভোটারের। পৌর নাগরিকরা তাদের ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটিয়ে টানা তিনবার তাকে মেয়র পদে অধিষ্ঠিত করেছেন। জনগনের ভালোবাসা আছে বলেই জননেত্রী শেখ হাসিনা তার উপর আস্তা রেখে বিগত পৌর নির্বাচনে স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রতীক নৌকা তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ভোট দিয়ে এ প্রতীকের সম্মানও রেখে ছিলেন পৌর নাগরীকরা। আসন্ন পৌর নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ছাতক পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ হাজার ২৭৮ জন।
সবুজ সিলেট/ এস মায়াজ আহমদ তালহা