করোনা ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখনও অনুমাননির্ভর
দৈনিক মানচিত্র ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২০, ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণসবুজ সিলেট ডেস্ক::
করোনাভাইরাসের মতো এর ভ্যাকসিন নিয়েও আছে সংশয়। সাধারণ মানুষ তো বটেই, চিকিৎসকরাও বলছেন, এ ধরনের ভ্যাকসিনের সাইড এফেক্ট নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা এখনও হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘোষণা হলেও তারা ভ্যাকসিন নিতে চান না।
এদিকে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পিটার চিন হং বলেন, ‘২৫ থেকে ৫০ শতাংশ লোক তাদের প্রথম ডোজ গ্রহণের পর হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খ্যাতনামা ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান জনসন অ্যান্ড জনসনের করোনা টিকার ট্রায়াল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয় গত ১৩ অক্টোবর। তাদের ট্রায়ালে একজন স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হয়ে পড়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আবার আস্ট্রাজেনেকার ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে টিকার ডোজে এক নারী স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে কিছু জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়াতেও টিকার পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করা হয়। অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিজ্ঞানীরা জানান, টিকার ডোজ দেওয়ার পরই কোনও অজানা অসুখ দেখা দিয়েছে ওই স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে। তাই সুরক্ষার জন্য ট্রায়াল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে কী ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে সে বিষয়ে মুখ খোলেনি অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
যদিও এ নিয়ে হতাশার কিছু নেই বলে আশ্বাসের কথা জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন বলেছেন, সংক্রামক রোগের টিকার পরীক্ষায় এমন ঘটনা নতুন নয়। টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে গেলে অনেক সময়েই তার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সেই সমস্যার দ্রুত সমাধানও করে ফেলেন ভাইরোলজিস্টরা।
গত ৬ ডিসেম্বর অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকার দাবি করেছেন ভারতের এক স্বেচ্ছাসেবক। দেশটিতে এই ভ্যাকসিন তৈরি করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই)। ভারতীয় পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ওই স্বেচ্ছাসেবকের স্ত্রী দাবি করেছেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে তার স্বামীর স্মৃতিশক্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আচরণেও পরিবর্তন এসেছে। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখার পরও ভারতে এই পরীক্ষা বন্ধ রাখার কোনও কারণ খুঁজে পায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ভারতে এই পরীক্ষা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে এসআইআই’র ডাটা অ্যান্ড সেফটি মনিটরিং বোর্ড অ্যান্ড এথিকস কমিটি। ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেওয়ার পর তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হবে তার পুরোটাই অজানা। ভ্যাকসিন যাদের দেওয়া হবে তাদের কয়েক মাস পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। আগে থেকে কিছু বলা সম্ভব নয়। আমাদের আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে বিজ্ঞানভিত্তিক ফলাফলের জন্য।’
‘যেহেতু করোনার ভ্যাকসিনের কোনও ট্রায়াল আমাদের দেশে হয়নি তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না।’ এমন মন্তব্য করেন জাতীয় কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু, আবহাওয়া, জীবনাচরণ এসবের কারণেও ভ্যাকসিনের কার্যকারিতায় পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মাথা ঘোরা, জ্বর জ্বর ভাব দেখা দিতে পারে। আগে যেরকম টাইফয়েড, কলেরার ভ্যাকসিন নিলে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতো, করোনার ভ্যাকসিনেও সেটা হতে পারে। এজন্য শুরুতে যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে তাদের মনিটরিংয়ে রাখতে হবে।’
‘করোনা ভ্যাকসিন যেটা দেওয়া হবে সেটা ফার্স্ট জেনারেশন তথা প্রথম প্রজন্মের ভ্যাকসিন। এর সাইড এফেক্ট সম্পর্কে এখনও কিছু জানি না আমরা। বিশেষ করে আমাদের দেশে আগে কোনও ভ্যাকসিনের ট্রায়ালও হয়নি।’ বলেন অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
বেসরকারি এএমজেড হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন এবং আইসিইউ বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘কোনও ভ্যাকসিনই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়। করোনা ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা জ্বর, সর্দি, কারও কারও মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা দেখা দিয়েছে। তবে মারাত্মক সাইড এফেক্টের সংখ্যা খুবই কম।
ডা. মোহাম্মদ সায়েম আরও বলেন, এটা যে খুব একটা বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করবে তা নয়। তবে করোনা ভ্যাকসিনের সাইড এফেক্টগুলো এখনও গবেষণার পর্যায়েই আছে।
এদিকে, জনমনে ভয় দূর করতে সাবেক তিন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতো ক্যামেরার সামনে করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আডানম গেব্রিয়াসিস। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
সেখানে বলা হয়, বিশ্বের একাধিক দেশের একাধিক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন। টিকা নিয়ে জনমনে ভয়-ভীতি দূর করতেই তাদের এই উদ্যোগ। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তিন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটন ক্যামেরার সামনে টিকা নেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন।
সবুজ সিলেট/০৯ ডিসেম্বর/শামছুন নাহার রিমু