নারীরা না এগোলে সমাজকে খুঁড়িয়ে চলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
দৈনিক মানচিত্র ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২০, ৯:০২ পূর্বাহ্ণসবুজ সিলেট ডেস্ক::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সমাজের অর্ধাংশকে আমরা যদি এগোতেই না দিই, তাহলে কী করে একটা সমাজ দাঁড়াতে পারে। সমাজকে তো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হবে।’
বেগম রোকেয়া দিবসে বুধবার (৯ ডিসেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তিনি এই কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সমাজে যেখানে অর্ধাংশ নারী, একটা সমাজকে যদি উন্নত করতে হয়, তারা সমানভাবে যদি নিজেদের তৈরি করতে না পারে, তাহলে সেই সমাজ কীভাবে গড়ে উঠবে?’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা চাই আমাদের দেশের মেয়েরা সমানভাবে এগিয়ে যাক। কারণ বেগম রোকেয়াই আমাদের পথ দেখিয়ে গেছেন।’
সমাজে নারীর ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে নিজের মা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের কথাও স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মা, যিনি সারাজীবন আমার বাবার পাশে থেকে এই স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন… যখন আমার বাবা জেলে থাকতেন, তখন দল গঠন থেকে শুরু করে আন্দোলন সংগ্রাম করা বা তার মামলা মোকদ্দমা দেখা বা আমাদেরকে মানুষ করা, লেখাপড়া শেখানো- সব দায়িত্ব কিন্তু আমার মা নিজে করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কাজেই সেখানেও আমি দেখি… সমাজে কত বড় দায়িত্ব তিনি পালন করে গেছেন। অথচ কোনো প্রতিষ্ঠনিক শিক্ষার সুযোগ তার ছিল না, কারণ সেই যুগে মেয়েরা একটু বড় হলে আর তাদেরকে স্কুলে যেতে দেওয়া হত না, পড়তে দেওয়া হত না। আমি দেখেছি, আমার মা খুব জ্ঞানপিপাসু ছিলেন এবং নিজের চেষ্টায় তিনি অনেক লেখাপড়া করতেন, আমাদেরকে সব সময় লেখাপড়া করতে উৎসাহিত করতেন।’
তৎকালীন সমাজের অচলায়তন ভেদ করে বেগম রোকেয়া যে নারীদের আলোর পথ দেখিয়েছিলেন, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি সমাজের একটা বিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন। এবং নিজের উদ্যোগে, অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে তিনি এই দেশের নারী সমাজকে এগিয়ে নিয়ে আসেন এবং তাদের শিক্ষায় আলোকিত করেন।’
রোকেয়ার লেখা থেকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি বলতেন’, “কন্যাগুলিকে সুশিক্ষিত করিয়া কার্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও। নিজের অন্ন, বস্ত্র উপার্জন করুক।”
সেই সময়ের সমাজে নারী শিক্ষার বাধাগুলো দূর করতে রোকেয়ার সংগ্রামের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম রোকেয়া তার ভাইয়ের থেকে শিক্ষা নিয়েছেন, পরবর্তীতে স্বামীর থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে নারীদের স্কুলে আনতে গেলে সেই সময় অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হত তাকে। কষ্ট করেই তিনি শিক্ষার আলোটা জ্বালিয়ে দিয়ে যান আমাদের জন্য। যার জন্য আজকে আমরা বলতে পারি, মেয়েরা অনেক সুযোগ আমরা পেয়েছি।’
স্বাধীনতার পর নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে জাতির পিতার নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হলে পরিবারে তার একটা গুরুত্ব থাকে এবং কীভাবে তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবেন- জাতির পিতা সেটা নিয়ে সব সময় চিন্তা করতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে সব সময় এই দিকটায় উদ্যোগ নিয়েছি। নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা, নারীদেরকে বেশি সুযোগ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকরি- সবক্ষেত্রে যেন তারা অবস্থানটা দৃঢ করতে পারে, আমরা কিন্তু সেই ব্যবস্থাটা নিয়েছি।’
নারীর শিক্ষা নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বৃত্তি দিচ্ছি, উপবৃত্তি দিচ্ছি। এমনকি আপনারা জানেন, প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষের উপর যে উপবৃত্তি দিই, সেই বৃত্তির টাকাটা সোজা মায়ের নামে চলে যায়।’
সবুজ সিলেট/০৯ ডিসেম্বর/শামছুন নাহার রিমু