কিয়ামতের দিন এই দুই শ্রেণির ধনীদের কী অবস্থা হবে
দৈনিক মানচিত্র ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ২:২৩ অপরাহ্ণ
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক :: ধন-সম্পদ মহান আল্লাহর নিয়ামত। কেউ আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে ধন-সম্পদ অর্জন ও খরচ করলে এটি কিয়ামতের দিন নাজাতের অসিলা হবে। যেহেতু এমন অনেক আর্থিক ইবাদত রয়েছে, যেগুলোর বিনিময়ে জান্নাতপ্রাপ্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবার কারো ক্ষেত্রে এই ধন-সম্পদই তার ধ্বংসের কারণ হবে। কারণ তারা অবৈধ উপায়ে ধন-সম্পদ অর্জন করেছে, কৃপণতা করেছে এবং গুনাহের কাজে তা ব্যয় করেছে। কিয়ামতের দিন এই দুই শ্রেণির ধনীদের কী অবস্থা হবে, তা নিম্নে তুলে ধরা হলো—
কিয়ামতের দিন যেসব ধনী শাস্তির সম্মুখীন হবে
কিয়ামতের দিন কিছু ধনী মানুষ একেবারে নিঃস্ব হয়ে উঠবে। তারা হলো—
যারা জাকাত না দিয়ে সম্পদ জমা করত : যারা আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ পেয়ে তার শুকরিয়া আদায় করেনি, সম্পদকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেনি, কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা হবে ভয়াবহ। পবিত্র কোরআনে তাদের শাস্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, আপনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। যেদিন জাহান্নামের আগুনে সেগুলো উত্তপ্ত করা হবে এবং সেসব দিয়ে তাদের কপাল, পাঁজর আর পিঠে দাগ দেওয়া হবে, বলা হবে—এগুলোই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। কাজেই তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ ভোগ করো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)
যারা অনাহারীদের অন্ন দিত না : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু যার আমলনামা তার বাঁ হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, হায়! আমাকে যদি দেওয়াই না হতো আমার আমলনামা, আর আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায়! আমার মৃত্যুই যদি আমার শেষ হতো! আমার ধন-সম্পদ আমার কোনো কাজেই এলো না। আমার ক্ষমতাও বিনষ্ট হয়েছে। ফেরেশতাদের বলা হবে, ধরো তাকে, তার গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। তারপর তোমরা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দগ্ধ করো। তারপর তাকে শৃঙ্খলিত করো এমন এক শিকলে যার দৈর্ঘ্য হবে ৭০ হাত, নিশ্চয়ই সে মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানদার ছিল না, আর মিসকিনকে অন্নদানে উৎসাহী করত না।’ (সুরা : হাক্কাহ, আয়াত : ২৫-৩৪)
যারা কৃপণতা করত : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কেউ কার্পণ্য করলে এবং নিজেরা অমুখাপেক্ষী মনে করলে, আর যা উত্তম তাতে মিথ্যারোপ করলে, তার জন্য আমরা সুগম করে দেব কঠোর পথ। আর তার সম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না, যখন সে ধ্বংস হবে।’ (সুরা : লাইল, আয়াত : ৮-১১)
যারা সুদ খেত : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) তার মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)
এ ছাড়া বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে যারা অবৈধ উপায়ে উপার্জন করে এবং গুনাহের কাজে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের দুর্ভোগের বিষয়ে বহু হুঁশিয়ারি রয়েছে।
কিয়ামতের দিন যেসব ধনী বিশেষ মর্যাদা পাবে
বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ থেকে যেসব ধনী তার সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করবে, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন এর উত্তম প্রতিদান দান করবেন। তারা হলো—
যারা মসজিদ তৈরি করে : যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে মসজিদ স্থাপন করবে, কিয়ামতের দিন তারা বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হবে। উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, আমি নবী রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সুপ্রসন্নতা অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ তৈরি করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩১৮)
যারা এতিমের প্রতিপালন করে : সাহাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি ও এতিমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনিভাবে নিকটে থাকবে। এই বলে তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙুল দুটি দ্বারা ইঙ্গিত করলেন এবং এ দুটির মাঝে কিঞ্চিৎ ফাঁক রাখলেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৩০৪)
যারা অন্যের আহারের ব্যবস্থা করে : যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে অনাহারীর খাবারের ব্যবস্থা করে, গরিব, দুঃখী ও এতিমের সহযোগিতা করে, পবিত্র কোরআনে তাদের সৌভাগ্যশালী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্যদান, এতিম আত্মীয়কে, অথবা দারিদ্র্য-নিষ্পেষিত নিঃস্বকে, তদুপরি সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় যারা ঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে উপদেশ দিয়েছে ধৈর্য ধারণের, আর পরস্পরকে উপদেশ দিয়েছে দয়া অনুগ্রহের, তারাই সৌভাগ্যশালী। (সুরা : বালাদ, আয়াত : ১৪-১৮)
রাসুল (সা.) বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন করো, আহার করাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন রাতের বেলা নামাজ পড়ো। শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৫১)
এ ছাড়া বিভিন্ন সদকায়ে জারিয়া ও জনকল্যাণমূলক কাজ করে, দ্বিনি ইলম শিক্ষার ব্যবস্থা করে সম্পদশালীদের কিয়ামতের দিন অধিক মর্যাদা লাভের সুযোগ রয়েছে। বারবার হজ-ওমরাহ করা ও অন্যকে নিজ খরচে হজ-ওমরাহ করার ব্যবস্থা করে দেওয়াও অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। যারা এ ধরনের কাজ করবে, কিয়ামতের দিন তারাও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হবে, ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পদ্ধতিতে সম্পদ অর্জন ও খরচ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।