দুই দেশের সম্পর্ক যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে
দৈনিক মানচিত্র ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণসবুজ সিলেট ডেস্ক ::
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও ৫০তম বছরে পা রেখেছে বাংলাদেশ-ভারত।’
বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে গণভবন থেকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদি নয়াদিল্লি থেকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব প্রদান করেন।
এ সময় মোদির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। মাত্র কয়েক মাস আগে আপনাদের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী আমরা উদযাপন শেষ করেছি। বাংলাদেশে আমরা বাপুজির (মহাত্মা গান্ধী) প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে একটি বিশেষ ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছি। আমরা আজ বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ভারতের ডাক বিভাগের একটি স্ট্যাম্পের উদ্বোধন করবো।’
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতিকে আরও সংহত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উভয় দেশ বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু-চেইন আরো সমৃদ্ধ করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, উভয় দেশ বিদ্যমান সহযোগিতামূলক ঐক্যমতের সুযোগ নিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে আরো সংহত করে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু-চেইন আরো সমৃদ্ধ করতে পারে।’
প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে এই বিষয়ে অনুঘটক হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি বড় উদাহরণ হল চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করা, যা আমরা আজ উদ্বোধন করব।’
বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুসম্পর্কের বিষয়ে ভারত সবসময়ই বাংলাদেশকে প্রাধান্য দেয়।’ এসময় করোনা মোকাবিলায় ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় দুই দেশ এক সাথে কাজ করবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
‘বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতা আমরা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দেই,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেশকিছু সংখ্যক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের উৎপাদন ও সেবাখাতে নিযুক্ত রয়েছেন এবং তারা নিজ দেশ ভারতে রেমিটেন্স পাঠিয়ে থাকেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক এবং চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারীকে ভারত গ্রহণ করে।’
এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো যৌথভাবে উদযাপনের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে একত্রিত হওয়ায় নরেন্দ্র মোদির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার এবং জনগণের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মানুষ আনন্দ, মুক্তি এবং উদযাপনের চেতনায় উদ্বেলিত হয়ে ওঠে।’ তিনি এই মাহেন্দ্রক্ষণে গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য ভারত সরকার ও জনগণকে জানাই কৃতজ্ঞতা।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিনটিকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন।
পরে বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ভারতের ডাকবিভাগে স্ট্যাম্প উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া দীর্ঘ ৫৫ বছর পর হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেল চলাচলের উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল বৈঠকের অংশ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, জ্বালানি, কৃষিসহ সাতটি খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
সবুজ সিলেট/ এস মায়াজ আহমদ তালহা