সৌন্দর্যকে পুঁজি করে নীলার ১০ বিয়ে, আদালতের সমন জারি
দৈনিক মানচিত্র ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১:৩৮ অপরাহ্ণমানচিত্র ডেস্ক: খুলনায় সৌন্দর্যকে পুঁজি করে প্রতারনা করে সুলতানা পারভীন নীলা ১০ বিয়ে করেছে। যা পরবর্তীতে তার নীজ ইচ্ছায় মোটা অংকের বিণিময়ে ছাড়াছাড়ির ঘটনা ঘটেছে। এমতাবস্থায় ১০ বিয়ে করা সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে বৃষ্টির বিরুদ্ধে সমন জারিও করেছেন আদালত।
অভিযোগ রয়েছে, সৌন্দর্যকে পুঁজি করে প্রতারণার মাধ্যমে নাম পাল্টিয়ে এবং কুমারী পরিচয় দিয়ে প্রায় ১০টি বিয়ে করেছেন তিনি। প্রতারণার দায়ে জেলও খেটেছেন তিনি।
মঙ্গলবার সমন জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আসাদুল আলম। এর আগে, গত ২৮ নভেম্বর এ সময় জারি হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে গেছে, সুলতানা পারভিন ওরফে নীলা- জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী এটিই তার নাম। যদিও তিনি প্রতারণার জন্য কখনো নিজেকে সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি, কখনো রুমাইনা ইয়াসমিন রূপা, নাজিয়া শিরিন শিলা, স্নিগ্ধা আকতার নামেও পরিচয় দেন। নিজের সৌন্দর্য এবং কথার জালে আটকান প্রবাসী, ধনী এবং ব্যবসায়ীদেরকে। নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে আটটি বিয়ের করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সব বিয়েই ছাড়াছাড়ি হয়েছে বিয়ের অল্প কিছু দিনের মধ্যে।
মামলার ভয় দেখানোসহ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে কৌশলে টাকা, বাড়ি নিয়েছেন নিজের করে। এইসব স্বামীদের করেছেন সর্বস্বান্ত। বার বার বিয়ে করা এবং অর্থ সম্পদ নিয়ে ছাড়াছাড়ি মতো প্রতারণাই এই সুন্দরী নারীর মূল পেশা। তার এই প্রতারণা পেশার প্রধান সহযোগী তার ভাই এবং পরিবার। গত বছর এমন প্রতারণা করতে গিয়ে সাবেক এক স্বামীর করা মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। বিয়ে ছাড়াও তার রয়েছে অসংখ্য বয়ফ্রেন্ড। সরকারি আমলা, রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে রয়েছে তার উঠাবসা।
১৯৯৯ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়স তার প্রথম বিয়ে হয় মাদারীপুরের হরিকুমারিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিম শিকদারের জাপান প্রবাসী ছেলে শাহাবউদ্দিন সিকদারের সঙ্গে। তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন ও মালামাল চুরির ঘটনায় মাদারীপুর সদর থানায় একটি জিডি করেন শাহাবউদ্দিন। যার নম্বর ৭৩৮, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯। পরে ২০০১ সালে শাহাবউদ্দিনের সঙ্গে বৃষ্টির বিচ্ছেদ হয়। দ্বিতীয় বিয়ে হয় ২০০৫ সালে এসএম মুনির হোসেনের সঙ্গে। ২০০৮ সালের এপ্রিলে বিয়ে করেন খুলনা নগরীর খালিশপুর এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনিকে।
নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়ায় বৃষ্টির বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বামী বনি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে যথারীতি টাকা আদায় করতে বনির বিরুদ্ধেও খুলনার বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা করেন বৃষ্টি। বনির সঙ্গে মামলা চললেও ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের ইফতিখার নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন। এরপর ২০১২ সালে বিয়ে করেন বাগেরহাটের বাসিন্দা কামাল হোসেনকে। ২০১৭ সালে ইতালি প্রবাসী মাদারীপুরের মোহাম্মদ আজিমকে, ২০১৮ সালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ রহমানকে এবং ২০১৯ সালে খুলনা মহানগরীর নাজির ঘাট এলাকার মো. আব্দুল বাকীকে বিয়ে করেন।
আট নম্বর স্বামী মো. আব্দুল বাকীর সঙ্গে প্রতারণা করায় বৃষ্টির বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে চেক ও টাকা-পয়সা চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ কার্যালয়ে তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জে থাকার সময় ঢাকার একটি ফ্ল্যাট নিজের নামে লিখে না দেওয়ায় আরো এক স্বামীকে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানো হয়। ঐ ঘটনায় প্রতারক বৃষ্টির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২ মে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় জিডি করা হয়।
২০২১ সালে জানুয়ারিতে খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে আফরীন আহমেদ নামে এক আত্মীয়ের বাসায় কিছুদিন থাকেন সুলতানা বৃষ্টি। সেই সুযোগে আত্মীয়ের বাসা থেকে একটি চেকের পাতা চুরি করে অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। ঐ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই খুলনা কার্যালয়ে তদন্তাধীন রয়েছে। এভাবে প্রতিটি বিয়ে করেছেন নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে। বিয়ের পর মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে স্বামীদের কাছ থেকে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। বৃষ্টির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুই স্বামী মারাও গেছেন।
খুলনা জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের অনুমোদিত তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সুলতানা পারভীনের নিকাহ রেজিস্ট্রিকারী মাওলানা এএসএম নুরুল হক। তিনি বৈধ নিবন্ধিত নিকাহ রেজিস্ট্রার নয়। এই ভুয়া নিকাহ রেজিস্ট্রার দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে পবিত্র কাজটি করতেন তিনি। বিয়ের পর সংসার চালানো, নিজের খরচ, দেনমোহর ও স্বামীর থাকা ফ্ল্যাট নিজের নামে করতে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন নীলা।
ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনিকে কুমারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে বিয়ে করায় বৃষ্টির বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বামী বনি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলাটি করা হয়। মামলাটি তদন্তাধীন ছিল। এরমধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে আদালতে। অন্যদিকে আদালতে হাজির না হওয়ায় আবারো সমন জারি করেন আদালত।
এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আসাদুল আলম জানান, আসামিপক্ষকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছেন আদালত। নির্দিষ্ট তারিখে আদালতে হাজির না হলে ওয়ারেন্ট হয়ে যেতে পারে।