গৃহবধূকে হত্যার পর তার টাকায় বন্ধুদের নিয়ে উল্লাস করতে যান সেলিম
দৈনিক মানচিত্র ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণসবুজ সিলেট ডেস্ক::
ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিয়ানগরে ফাতেমা আক্তার বাবলী (২৮) নামে এক গৃহবধূকে হত্যা করে তার টাকা হাতিয়ে নিয়েই বন্ধুদের নিয়ে মৈনট ঘাটে আনন্দ-উল্লাস করতে গিয়েছিলেন মো. সেলিম (২৫)। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে এখন পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন তিনি।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর জিয়ানগরে মসজিদের পূর্বপাশের একটি বাড়িতে খুন হন ফাতেমা আক্তার বাবলী। ওড়না দিয়ে হাত-পা বাঁধা বাবলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় বাবলীর বাবা মো. বাবুল অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যামামলা করেন।
বাবলীর বাবা মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, বাবলীর স্বামী আব্দুস সামাদ খোলামোড়া গুদাড়াঘাটে প্রতিদিনের মতো ২৬ সেপ্টেম্বর বিকালেও সেদ্ধ ডিম বিক্রি করতে যান। সে দিন দিবাগত রাতে তিনি রাত ১টার দিকে ফিরে এসে বাবলীর হাত-পা বাঁধা গলাকাটা লাশ দেখতে পান। বিষয়টি তাৎক্ষণিক স্বজনদের ফোনে জানান। এরপর পুলিশ এসে বাবলীর লাশ উদ্ধার করে।
বাবলীঘটনার পর কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে সেলিম নামের পাশের বাড়ির এক যুবককে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশ জানতে পারে বাবলীর সঙ্গে সেলিমের দীর্ঘদিনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। মোবাইলফোনে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন কথাবার্তার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেলিমেরও বাবলীর বাসায় যাতায়াত ছিল বলে জানতে পারে পুলিশ।
২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাবলীর বাসায় যান সেলিম। সেলিমের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় ওই এলাকা থেকে কামরাঙ্গীরচরে বাসা নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাবলী। এ কারণেই সেলিম বাবলীকে হত্যা করে।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার পর সেলিম বাবলীর বাসা থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা নিয়ে তার বন্ধু জয় ও মামুনকে নিয়ে মৈনট ঘাটে যান। হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে নিজেকে বাঁচাতে রাত ৮টার দিকে মৈনট ঘাটের দিকে রওনা হন তিনি। তবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন সন্ধ্যা ৭টার দিকে রওনা হচ্ছেন বলে।
থানা-পুলিশ এক মাস তদন্ত করার পর গত ১৯ নভেম্বর ঢাকা জেলা পিবিআই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায়।
এদিকে মৈনট ঘাটে যাবার পর ছিনতাইয়ের শিকার হন সেলিম। এই ঘটনায় দোহার থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলাটিরও তদন্ত করছে পিবিআই।
ছিনতাইয়ের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পিবিআই। সেলিমের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া চক্রটিকে ফোন করে ডেকে এনেছিল জয়।
চাঞ্চল্যকর এবং ক্লুলেস মামলা হওয়ায় পিবিআই ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মামলাটি স্ব উদ্যোগে গ্রহণ করে তদন্তের দায়িত্ব দেন এসআই সালেহ ইমরানকে।
গত ৩ ডিসেম্বর রাতে এসআই সালেহ ইমরান কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জিয়ানগর এবং কালিন্দী এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেন জয়, আলিফ ও দেলোয়ার নামের তিন জনকে। উদ্ধার করেন ছিনতাই হওয়া মোবাইলফোন। ৪ ডিসেম্বর গ্রেফতার তিন জন ইতোমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
আটক অন্যরাএসআই সালেহ ইমরান জানান, জয় জানতেন সেলিমের কাছে টাকা আছে। তাই নিজের পরিচিত একটি ছিনতাইকারী চক্রকে দিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা সাজান তিনি। এ কাজে জয় তার পূর্বপরিচিত বন্ধু আলিফকে ডেকে আনেন। আলিফ তার অপর দুই বন্ধু রনি ও সাগরকে সঙ্গে নিয়ে অটোরিকশা নিয়ে মৈনট ঘাটে অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত ১০টার দিকে সেলিম, মামুন ও জয় মৈনট ঘাটে আসলে জয়ের ইশারায় আলিফের নেতৃত্বে ধারালো চাকু দেখিয়ে প্রথমে জয়ের কাছ থেকে মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেন আলিফ। পরে মামুনের কাছ থেকেও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় রনি ও সাগর।
এদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাবলীকে হত্যার পর মামুন ও জয়ের সঙ্গে দেখা করেন সেলিম। তবে হত্যার বিষয়টি বন্ধুদের জানাননি তিনি। দেখা করার সময় সেলিমকে খুব অস্থির লাগছিল বলে ওরা জানায়। সেলিম, জয় ও মামুনকে নিয়ে এরপর মৈনট ঘাটে মাছ কিনতে যাবে বলে অটোভাড়া করে চলে যায়।
এদিকে বাবলীকে তার স্বামী সামাদ ফোন দিয়ে পাচ্ছিলেন না। পরে তিনি সেলিমকে ফোন দেন। বাবলী কেন ফোন ধরছে না সেটার খোঁজ নিতে সেলিমকে অনুরোধও করেন সামাদ। সেলিম খোঁজ জানাবে বললেও পরে আর ফোন করেননি।
পুলিশের হাতে গ্রেফতার সেলিম প্রাথমিকভাবে হত্যার কথা স্বীকার করলেও আদালতে এখনও স্বীকারোক্তি দেননি। পাঁচ দিনের রিমান্ডের আরও এক দিন বাকি রয়েছে।
সবুজ সিলেট/০৬ডিসেম্বর/শামছুন নাহার রিমু