ছাতকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রাহক হয়রানী ও ঘুষ-দূর্নীতি এখন ওপেন-সিক্রেট, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
দৈনিক মানচিত্র ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২০, ২:৩৪ অপরাহ্ণছাতক প্রতিনিধি ::
ছাতকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রাহক হয়রানী ও ঘুষ-দূর্নীতির বিষয়টি এখন ওপেন-সিক্রেট ব্যাপার। প্রতিনিয়তই বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিষয়ে হয়রানী ও অর্থ দন্ডে দন্ডিত হচ্ছেন গ্রাহকরা। ভুতুরে বিল, ভূলে ভরা বিদুৎ বিল, অতিরিক্ত বিলসহ বিভিন্ন অজুহাতে গ্রাহকদের হয়রানী করা কোন নতুন ঘটনা নয়। বৈধ-অবৈধ সংযোগ থেকে উৎকোচ নেয়া, এরিয়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রন ও উৎকোচ গ্রহন, বিদ্যুৎ অফিস সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা অবৈধ পন্থায় সরাসরি বিদ্যুৎ ব্যবহার, ট্রান্সমিটার বানিজ্য, সংযোগ বানিজ্য, সংযোগ বিচ্ছিন্নকরন বানিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসছে বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। বিগত দিনে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারদর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের মিছিল, স্মারকলিপি প্রদান, অভিযোগ দেয়ার মতো ঘটনা একাধিকবার অতীতে ঘটেছে। ছাতকে যোগদান করার কিছুদিনের মধ্যেই গ্রাহকদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। এসব উদ্ভট পরিস্থিতি সৃষ্টির সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে গ্রাহকদের সেবায় সবকিছুই করবেন বলে কর্মকর্তারা আশ্বস্থ করে থাকেন। কিন্তু কাজের কাজ সবই গুড়েবালী। বর্তমানে ভোক্তভোগী গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিভ্রান্তির বিষয়ে অনেকটাই সহনশীল হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি উৎকোচ দাবী পূরন না করায় একটি বৈধ সংযোগকে অবৈধ করে সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ হয়রানীর বিরুদ্ধে দূর্নীদম কমিশন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ অঞ্চল সিলেট বরাবরে পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শহরের মন্ডলীভোগ এলাকার মৃত গোলাম রব্বানীর পুত্র সিরাজুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক। ছাতক বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপ সহকারী প্রকৌশলী ফজলে হাসান রাব্বী, লাইনম্যান নূর হোসেন, সিকিউরিটি আক্তার হোসেনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ৩০ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরারবরে এ অভিযোগ দেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, শহরের পূর্ব মন্ডলীভোগ এলাকার জরাজির্ন টিনসেডের ঘরে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে (মিটার নং-০১০২১০৭৫৬৪৯১) বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করে আসছেন সিরাজুল ইসলাম। ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী ফজলে হাসান রাব্বী, লাইনম্যান নূর হোসেন ও সিকুউরিটি আক্তার হোসেন ওই জরাজির্ন ঘরের সংযোগটি অবৈধ বলে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করা হয়েছে বলে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এ সময় গ্রাহক সিরাজুল ইসলামের কাছে উৎকোচ দাবী করেন। অন্যতায় মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকীও দেন তারা। এসময় বিদ্যুৎ অফিসের একটি প্যাডে অবৈধ সংযোগ ব্যবহারে ক্রুটি সমুহ সংশোধন করার জন্য ২দিনের সময়ে একটি নোটিশও দেয়া হয় ওই গ্রাহককে। নোটিশে বলা হয় ৪টি বাসায় অবৈধ সংযোগ দিয়ে ওই গ্রাহক ১৫টি ফ্যান, ১২টি বাতি, ২টি ফ্রিজ ও ২টি টিভি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষতি সাধন করে আসছে। তাদের উৎকোচের দাবী পুরন না করায় ২০ সেপ্টেম্বর ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৩২৬.২৩ টাকা ক্ষতিপূরন বিল তৈরী করে গ্রাহককে দেয়া হয়।
আবার ১৯ সেপ্টেম্বর ছাতক বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী আবুল কাশেম মিয়া বাদী হয়ে গ্রাহক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ সংযোগে বিদ্যুৎ বিভাগের ১ লক্ষ ৫ হাজার ৫৪০ টাকা ক্ষতি করেছে বলে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সিলেট বিদ্যুৎ আদালতে এমটি মামলা দায়ের করেন। এদিকে মামলায় ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে কালারুকা বাজার সংলগ্ন এলাকায়। যা সিরাজুল ইসলামের বসত ঘর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। উৎকোচের চাহিদা পুরন না করায় হয়রানী করা জন্য শ্রমজীবি সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। হয়রানী থেকে মুক্ত হতে ১৮ অক্টোবর গ্রাহক সিরাজুল ইসলাম ছাতক বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বরাবরে একটি আবেদন দেন। গ্রাহকের আবেদনটি গ্রহন না করে এ কর্মকর্তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। কর্মকর্তার এহেন আচরনে অপমানবোধ করে বিনা অপরাধে অপরাধী হয়ে বিচার প্রার্থী হয়ে এখন দ্বারে-দ্বারে হাটছেন সিরাজুল ইসলাম। অপরদিকে বিদ্যুৎ আদালতে দায়েরী মামলায় ১০ অক্টোবর জামিন লাভ করে বিষয়টি পুনঃ তদন্তের আবেদন করেন এ গ্রাহক। বিদ্যুৎ আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল হালিম পূনঃ তদন্তের আবেদন মঞ্জুর করে ২০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রেরনের জন্য ছাতক বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বলেন। এর প্রেক্ষিতে ২৩ নভেম্বর ঘটনার সরজমিনে পূনঃ তদন্ত করেন ছাতক বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ একটি তদন্ত টিম। স্থানীয়দের মতে দিন মজুরের একটি টিনের জরাজীর্ন ঘরে অবৈধ সংযোগের কথা বলে দেড় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিপূরন বিল দেয়ার বিষয়টি বাস্তবতার সাথে বড়ই গড়মিল। এ ছাড়া ওই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর মিটারটি থেকে সরসরি বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে মর্মে মিটারটির ক্রুটি সমুহ ২দিনের মধ্যে সংশোধনের জন্য গ্রাহককে লিখিত নোটিশ দেয়া হয় বিদ্যুৎ অফিসের পক্ষ থেকে। ওই নোটিশে কোন টাকার অংক বা অবৈধভাবে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ইউনিটের কথা উল্লেখ করা হয়নি। আবার ঘটনাস্থল শহরের মন্ডলীভোগ হওয়া সত্তে¡ও মামলায় দেখানো হয়েছে কালারুকা বাজার সংলগ্ন এলাকা। এসব বিষয়গুলো অবৈধ লেনদেনের ইঙ্গিত বহন করছে বলে ভোক্তভোগীরা মনে করছেন।